এটা কিঃ অনেকটা একরম যে, এপ্রিলের প্রথম তারিখে কেউ আপনার কাছে গিয়ে অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি ঘটনা শুনালো, ফলে আপনার চেহারা লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে পানি ঝর ঝর করে পড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ সে হেঁসে দিয়ে বলল আমি যে ঘটনাটি বললাম তা বাস্তব নয়; বরং তোমাকে ধোকা দেওয়ার জন্য বলেছি। বোকা বানানোর জন্য আমি এই ঘটনাটি শুনিয়েছি।
অথবা
কেউ আপনাকে একটি গিফট্ বক্স দিল। আপনিও খুব আগ্রহের সাথে তা গ্রহণ করলেন। খুলে দেখলেন এর ভিতর কিছুই নেই। তখন আপনি বোকা বনে গেলেন। আপনি বুঝতে পারলেন আজকে এপ্রিলের প্রথম তারিখ, তাই আপনাকে বোকা বানানোর জন্য এই কাজ করা হয়েছে। আগে থেকে জানতেন, বুঝতেও পারছেন।
এর উদ্ভব হয় ফ্রান্স থেকে। ফ্রান্সের লোকেরা এই কাজ শুরু করে। ফ্রান্সে ১৭০০শতাব্দীর আগে বছর গণনা শুরু করা হতো এপ্রিল মাস থেকে। আমরা বছর গণনা শুরু করি জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তারা বছর গণনা শুরু করতো এপ্রিল থেকে মার্চ পর্যন্ত। কারণ তারা একটি দেবতাকে পূজা করত আর তাদের ঐ দেবতার নাম যা ছিল, সহজ উচ্চারনে তাকে "এপ্রিল" ডাকা যায়। তারা তাদের দেবতার সম্মানার্থে এপ্রিল থেকে বছর গণনা শুরু করতো। এপ্রিল মাস যখন আসতো তারা তাদের দেবতার সম্মানার্থে নানা ধরনের উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। আশ্চয্যজনকভাবে সেই আনন্দ- উৎসবের একটি হলো একজন আরেকজনকে বোকা বানানো। এটি তাদের খেলার একটি অংশ ছিল। এভাবে এটি সমাজে প্রচলিত হয় এবং ফ্রান্স থেকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তা পালিত হয়। তাহলে বুঝা গেল এর মূল উৎস্থল হচ্ছে ফ্রান্স। একটি দেবতাকে খুশি করার অংশ হিসেবে এপ্রিল ফুল পালিত হতো।
‘ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা’ প্রথম খণ্ডে আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলো ঋতুর পরিবর্তনের কারণে এপ্রিল ফুল পালন করা হতো। অর্থাৎ ইউরোপের দেশেগুলোতে ২১শে মার্চ হতে ঋতুর মাঝে পরিবর্তন শুরু হতো। ২১শে মার্চের আগে শীত থাকতো। এরপর থেকে প্রকৃতির মধ্যে পরিবর্তন আসতো। তখন লোকেরা মনে করতো প্রকৃতি আমাদের সাথে তামাশা করছে, এতদিন এক রকম ছিল এখন অন্য রকম হয়ে গেছে। এপ্রিল মাস যখন আসতো প্রকৃতি পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যেতো। পহেলা এপ্রিল তারা মনে করতো যে, প্রকৃতি যখন আমাদের সাথে তামাশা করছে, আমরাও একজন আরেকজনের সাথে তামাশা করি। তখন থেকে তারা পহেলা এপ্রিল একে অপরকে বোকা বানাতো। এভাবে পালিত হতে শুরু করে পহেলা এপ্রিল।
‘ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা’য় আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ্। সেটি হলো হযরত মূসা (عليه سلم) এর পর হযরত ঈসা (عليه سلم) যখন ইহূদী সম্প্রদায়ের মাঝে দীনের দাওয়াত নিয়ে আসলেন তখন ইহূদী পাদ্রীরা তাঁর উপর ক্ষেপে গেলো। তারা ভাবলো ঈসা (عليه سلم)যেভাবে দ্বীনের দাওয়াত শুরু করেছে এভাবে চলতে থাকলে তাদের পাদ্রীত্ব থাকবেনা। লোকেরা আমাদের কথা শুনবেনা আমাদেরকে ভক্তি শ্রদ্ধা করবেনা। আমাদের আয়-ইনকাম বন্ধ হয়ে যাবে। অতএব ঈসা (عليه سلم) কে প্রতিহত করতে হবে। তাই তারা হযরত ঈসা (عليه سلم) এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলো। এছাড়া রোম সাম্রাজ্যে যারা ক্ষমতাসীন ছিল, ইহূদী পাদ্রীরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে সম্পর্ক তৈরী করলো। তাদেরকে এ মর্মে প্ররোচিত করলো যে, ঈসা যেভাবে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেছে একে যদি এখনই প্রতিহত না করা হয়, তাহলে ঈসার মাধ্যমে তোমাদের ক্ষমতার মসনদ উল্টে যেতে পারে। অএতব আমরা ধর্মীয়ভাবে তাকে মুকাবেলা করবো, তোমারা রাষ্ট্রীয়ভাবে তার মুকাবালা কর। ইহূদী পাদ্রীরা হযরত ঈসা (عليه سلم) কে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে লাগলো, অপরদিকে রোম সম্রাট তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করলো। মামলার হাজিরা দিতে তিনি যখন রোমের আদালতে গেলেন, বিচারপতি বললেন আপনার মামলার শুনানি এই আদালতে নয় অন্য আদালতে। তিনি যখন আরেক আদালতে গেলেন সেখানকার বিচারপতিও একই কথা বলল যে, আপনার মামলার শুনানিআমি করতে পারবোনা অন্য আদালতে যান। তিনি আরেক আদালতে যান। আসলে তাদের উদ্দেশ্য বিচার করা নয়; বরং বোকাবানানো উদ্দেশ্য। এই ঘটনা ঘটায় কুচক্রি ইহূদী জাতি পহেলা এপ্রিল, সেদিন থেকে ইহূদী জাতি এপ্রিল ফুল পালন করা শুরু করে।
‘ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা’ এই ঘটনাকে সবচেয়ে গুরুত্বেরসাথে উল্লেখ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে আমেরিকা ইউরোপ যেখানে কোটি কোটি খৃষ্টান বসবাস করছে, যারা যিশু খৃষ্টের অনুসারী বলে দাবী করে। তারাই এপ্রিল ফুল বেশি পালন করে। তারা জানেনা যে, ইহূদীরা তাদের নবীকে হয়রানি ও বোকা বানানোর কারণে এই দিনকে ‘এপ্রিল ফুল’ হিসেবে পালন করে। এই তিনটি তামত উল্লেখ করা হয়েছে ‘ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’য়।
এখানে আরেকটি ইতিহাস পাওয়া যায় যে, স্পেনের মুসলিমদের করুণ পরিণতি থেকে ‘এপ্রিল ফুল’ এর উৎপত্তি। মুসলমানরা উরোপের স্পেনকে জয় করে সেখানে আটশত বছর রাজত্ব ও শাসন করেছে। ১৪৯২খৃষ্টাব্দে আবার খৃষ্টানরা তা দখল করে নিয়েছিল। মুসলিম খলীফাগণ ৮০০বছর স্পেনকে শাসনকালে কর্ডোবা, গ্রানাডাসহ বিভিন্ন নগরীতে বিশাল বিশাল মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছে। সেসব মসজিদ মাদরাসায় হাদীস ও তাফসীরের দরস দেওয়া হতো। একসময় খৃষ্টানরা সে বিশাল অঞ্চলকে দখল করে নেয়।
মুসলমানদের সর্বশেষ রাজা ছিল হাসান। খৃষ্টানরা তাকে গদীচ্যুত করতে বিভিন্ন কৌশল ও চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তখন তারা আরেকটি কৌশল অবলম্বন করে। তারা হাসানের পুত্র আবু আব্দুল্লাহকে বলল, তুমি যদি তোমার বাবাকে সিংহাসন থেকে নামাতে পার, তাহলে আমরা তোমাকে ক্ষমতা দান করবো। লোভ দেখিয়ে ছেলেকে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করিয়েছে। আবু আব্দুল্লাহ তার পিতা হাসানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলো। হাসান দেখেলেন কোনো উপায় নেই, তাই তিনি পালিয়ে গেলেন। পরিশেষে খৃষ্টানরা আবু আব্দুল্লাহকে ক্ষমতায় বসিয়ে আল হামরা প্রাসাদের চাবি নিয়ে গেলো। বিশাল রাজকীয় প্রাসাদ আল হামরা, যেখানে বসে মুসলমানরা শাসনকার্য পরিচালনা করতো। বর্তমান হোয়াইট হাউজ যেমন আমেরিকার শাসনকেন্দ্র, তদ্রূপ স্পেনের মুসলমানদের জন্য ছিল আল হামরা। এক পর্যায়ে খৃষ্টানরা আবু আব্দুল্লাহকে প্রস্তাব দিল যে, তোমরা মুসলমান এখন সংখ্যায় একেবারে অল্প কয়েকজন। তোমরা যদি বাঁচতে চাও, তাহলে জাহাজে উঠ। তোমাদেরকে পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ মরক্কোতে আমরা পাঠিয়ে দিবো, তোমাদের কোনো কষ্ট হবেনা। যে আবু আব্দুল্লাহকে রাজ শাসনের লোভ দেখিয়েছিল, সে আবু আব্দুল্লাহকে স্বার্থ হাসিলের পর ছেঁড়া জুতার মত খৃষ্টানরা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
সকল মুসলমানকে জাহাজে তোলা হল আর বলা হয়েছে তোমরা সাগর পাড়ি দিয়ে পার হয়ে যাও। মুসলমানরা যখন সমুদ্রের মাঝখানে পৌঁছলো তখন তারা জাহাজটিকে ডুবিয়ে দেয় এবং সকল মুসলিমকে শহীদ করে ফেলে। এই ঘটনা ঘটেছে এপ্রিলের প্রথম তারিখ। স্পেনের মুসলমানদের বোকা বানানোর এই ঘটনাকে স্বরণ করে খৃষ্টনরা পহেলা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করে।
কোনো কোনো বর্ণনায় আছে মুসলমানদেরকে একটি মসজিদ ভিতর প্রবেশ করিয়েছিল। অতপর মসজিদের চতুর্দিকে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে সকল মুসলিম জ্বলে-পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এপ্রিলের প্রথম তারিখ মুসলমানদের জন্য আনন্দদায়ক নয়; বরং দু:খজনক। বর্তমানে অনেক মুসলমান এপ্রিল ফুলের ইতিহাস না জানার কারণে মিডিয়ার অন্ধ অনুসরন করে পহেলা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল’ পালন করে।
আশা করি, চোখ বন্ধ করে মিডিয়া কে ফলো করে নিজেকে বোকা বানাবেন না।